নদীভাঙনের করাল গ্রাসে তলিয়ে যাচ্ছে মালদহ ও মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকা। ভাগীরথী, পদ্মা ও ফুলহার নদীর ক্রমাগত ভাঙনে ইতিমধ্যেই প্রায় ২৫ হাজার বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অথচ কেন্দ্র নীরব। বুধবার রাজ্য বিধানসভায় এই ইস্যুতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিলেন সেচ ও জলপথ দফতরের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া।
তিনি জানান, রাজ্যের তরফে বারংবার ভাঙন রোধে কেন্দ্রীয় সহায়তার দাবি জানানো হলেও কেন্দ্র কোনও অর্থসাহায্য করেনি। এমনকি ২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষেও এক টাকাও মেলেনি। পূর্বতন ৭৫:২৫ অনুপাতে অর্থসাহায্য দেওয়া হলেও বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার প্রথমে তা ৫০:৫০ এবং পরে ৬০:৪০ অনুপাতে রূপান্তরিত করেছে বলে বিধানসভায় জানান মন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ছয়টি প্রকল্পের জন্য ৪৪৪৯ কোটি টাকার পরিকল্পনা পাঠানো হলেও এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি। “আপনারা চান বাংলা পচে মরুক,”— এই ভাষাতেই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার নিন্দা করেন মানসবাবু। ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানেও কেন্দ্র সহযোগিতা করেনি বলেও তিনি উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য বাজেটে ইতিমধ্যেই ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৫০০ কোটি দিয়ে কাজও শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গের সমস্যা তুলে ধরে মন্ত্রী জানান, ভুটান থেকে নেমে আসা ৭৬টি নদী উত্তরবঙ্গের জনজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন না হওয়ায় সেই সমস্যার সমাধানে রাজ্যকে এককভাবেই ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।
মন্ত্রী দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজে সামশেরগঞ্জে ছুটে গিয়ে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাজ্যের পক্ষ থেকে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, দেওয়া হয়েছে বাংলার বাড়ি ও পাট্টা। ইতিমধ্যেই ২৫৯৯টি পরিবারকে জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে। মালদহে ২১৮টি ও মুর্শিদাবাদে ১৯৫টি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ২০১৭ সালে সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের পরিকল্পনা তৈরি হলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী ২০২২ সালেও কেন্দ্রকে চিঠি দেন, তবে এখনও কোনও উত্তর মেলেনি। এমনকি বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থায়ন সত্ত্বেও প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। মন্ত্রী অভিযোগ করেন, “বাংলাকে শুকিয়ে মারো, বাংলাকে ডুবিয়ে মারো— এটাই যেন কেন্দ্রের নীতি।” পাশাপাশি কেশপুর ও চন্দ্রকোনা প্রকল্পে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে এবং হুগলিতেও শীঘ্রই প্রকল্প রূপায়ন হবে বলে জানান তিনি। উন্নয়নের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মানসবাবু বলেন, সমস্ত রাজনৈতিক দলকে একত্র হয়ে বাংলাকে রক্ষা করার জন্য এগিয়ে আসা উচিত।