১৬ মে শীর্ষ আদালত একটি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিয়েছিল, যেখানে ৪ সপ্তাহের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ৬ সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের বকেয়া ২৫ শতাংশ ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই নির্দেশকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করার আগে এর কয়েকটি ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়ে রাজ্যের তরফে সুপ্রিম কোর্টে একটি ‘মডিফিকেশন’ আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপের মূল কারণ হল, ১৬ মে-র নির্দেশের কয়েকটি ধারা নিয়ে অস্পষ্টতা। নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, কতটা বকেয়ার উপর ভিত্তি করে এই ২৫ শতাংশের হিসেব হবে, কোন সময়কাল থেকে বকেয়া ডিএ ধরা হবে এবং তার ভিত্তি কী হবে, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে স্পষ্ট ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে বলে রাজ্য সরকার মনে করছে। এই বিষয়গুলির বিশদ ব্যাখ্যা পাওয়া গেলে নির্দেশ পালনে সুবিধা হবে বলে রাজ্য মনে করছে। প্রশাসনের কোনো আধিকারিক এই বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি না হলেও, আইনজীবীদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পরেই এই আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই আবেদনটি মূল মামলাটিকে প্রভাবিত করবে না। অর্থাৎ, ডিএ সংক্রান্ত মূল মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে তার স্বাভাবিক গতিতে চলবে। রাজ্য সরকার অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশটি পুনর্বিবেচনার আবেদনও জানায়নি। বরং, এটি নির্দেশ পালনে আরও স্বচ্ছতা এবং সুবিধা আনার উদ্দেশ্যে কিছু পরিবর্তন চেয়ে একটি আবেদন মাত্র। উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে। তবে, এই ছুটির কারণে বকেয়া ডিএ মেটানোর প্রস্তুতি থেমে নেই। পূর্বের নির্দেশ অনুযায়ী বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার অভ্যন্তরীণভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে খবর। বিভিন্ন সরকারি দফতর এবং সংস্থাগুলির কাছে কর্মচারীদের সংখ্যা এবং তাদের কার্যকালের মেয়াদ সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হচ্ছে, যাতে ডিএ-র হিসেব নিরূপণ সহজ হয়। একটি বেসরকারি সংস্থাকে এই সংক্রান্ত প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে, যা সরকারি কর্মীদের নিজস্ব পোর্টাল 'ইন্টিগ্রেটেড ফিনানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম'-এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করবে। ২০০৯ সালের ‘রোপা’ কার্যকর হওয়ার পর থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কার্যকালের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এই তথ্যগুলি সরকারের জন্য একটি রিপোর্ট তৈরি করতে সাহায্য করবে, যা সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা হবে। প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য সরকারি কর্মীরা কেন্দ্রীয় সরকারের সমহারে ডিএ পাওয়ার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। এই মামলাটি রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল (স্যাট) এবং কলকাতা হাইকোর্ট হয়ে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে। হাইকোর্ট কেন্দ্রের সমতুল ৩১ শতাংশ হারে ডিএ দেওয়ার নির্দেশ দিলেও, রাজ্য সরকার সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। দীর্ঘ অপেক্ষার পর ১৬ মে সুপ্রিম কোর্টের এই অন্তর্বর্তী নির্দেশ আসে, যা কর্মীদের আংশিক স্বস্তি দিলেও রাজ্য সরকারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এখন সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং রাজ্য সরকারের আবেদনের ওপর এই মামলার ভবিষ্যত নির্ভর করছে।