গ্রন্থবদ্ধ হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভার ভাষণ দেড় দশকের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের দলিল প্রকাশের পথে
রাজ্যের প্রশাসনিক ইতিহাসে এক অনন্য উদ্যোগ নিতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার লাইব্রেরি কমিটি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গত দেড় দশকের বিধানসভা ভাষণ এবার সংকলিত হয়ে প্রকাশিত হবে একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থে।
২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার পর থেকে শুরু করে ২০২৫ পর্যন্ত বিধানসভায় প্রদত্ত মুখ্যমন্ত্রীর সমস্ত ভাষণ এই বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই বইটির খসড়া প্রস্তুত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। খসড়াটি শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। মুখ্যমন্ত্রী যেসব ভাষণ অনুমোদন করবেন, কেবলমাত্র সেগুলিই গ্রন্থের চূড়ান্ত সংস্করণে প্রকাশ পাবে।
এই উদ্যোগকে ঘিরে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা ভাষণ কেবল রাজনৈতিক বক্তব্যে সীমাবদ্ধ নয়—তাতে প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর প্রশাসনিক দর্শন, রাজ্যের উন্নয়নের রূপরেখা, এবং জনকল্যাণমূলক ভাবনা। কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, সবুজশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, দুয়ারে সরকার, শিল্প নীতির পুনর্গঠন—এমন বহু প্রকল্প ও উদ্যোগের বিবরণ বিধানসভায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন তিনি। সেই ভাষণগুলো একটি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করলে রাজ্য পরিচালনার বাস্তব অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক অবস্থানের একটি আয়না হিসেবে প্রতিভাত হয়।
এই গ্রন্থ প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাস সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। রাজনৈতিক ভাষণের বাইরেও এই দলিল প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নীতিনির্ধারণের প্রেক্ষাপট, রাজনীতির ওঠানামা, বিরোধী দলগুলোর প্রতি সরকারের জবাবদিহি এবং উন্নয়নকামী রাজনীতির গতিপথ বুঝতে ভবিষ্যৎ গবেষক ও বিশ্লেষকদের কাছে এক অমূল্য উপকরণ হয়ে উঠতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বই মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক জীবন ও রাজ্য পরিচালনার রণকৌশলের এক সজীব দলিল। তাঁর চিন্তাভাবনা, জবাবদিহি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, এবং বাস্তবায়নের কৌশলগুলিকে বোঝার জন্য এই গ্রন্থ হবে এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল, যা পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রিক পরিবর্তন ও ‘পরিবর্তন’-পরবর্তী শাসনব্যবস্থার গভীর পাঠ দেবে। এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ইতিহাসের পাতায় একটি তাৎপর্যপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হবে।