উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। শনিবার জলপাইগুড়ি সফরে এসে তিনি জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন।
বৈঠকে বন্যা পরিস্থিতির তীব্রতা, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বর্তমান অবস্থা, নদীগুলির জলস্তরের বৃদ্ধি, বাঁধগুলির পরিস্থিতি, এবং ভবিষ্যৎ বৃষ্টি ও জলপ্রবাহের প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেচমন্ত্রী স্পষ্ট জানান, রাজ্য সরকার একাধিকবার কেন্দ্রীয় সরকারকে সহযোগিতার আবেদন জানালেও তারা কোনও প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
মন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্রের এই চরম নিষ্ক্রিয়তা উত্তরবঙ্গের লাখ লাখ মানুষের জীবনের সঙ্গে সরাসরি অবহেলা।” তিনি জানান, পাহাড়ি নদীগুলির যেমন তিস্তা, তোর্সা, রায়ডাক, কালজানি—এই সকল নদীর জলস্তর আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বহু বাড়ি ভেঙে পড়েছে, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, বহু মানুষ এখনো আশ্রয়হীন অবস্থায় রয়েছে।
সেচমন্ত্রী আরও জানান, রাজ্য সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বন্যা দুর্গত এলাকায় র্যাপিড রেসপন্স টিম পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে এনডিআরএফ ও সিভিল ডিফেন্স বাহিনীর সহায়তায়। ইতিমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য অস্থায়ী ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে।
তবে সমস্যার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতা। মন্ত্রী বলেন, “২০১৭ সাল থেকে আমরা উত্তরবঙ্গের নদীগুলির ড্রেজিং, বাঁধ সংস্কার ও নতুন প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের কাছে একাধিকবার প্রকল্প পাঠিয়েছি। কিন্তু প্রতিবারই রাজ্য সরকারের ফাইল ফেলে রাখা হয়েছে। অথচ এই নদীগুলির বড় অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন।”
উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি রুখতে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই নিজস্ব অর্থে কয়েকটি জরুরি প্রকল্প গ্রহণ করেছে বলে জানান মন্ত্রী। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে নদীগুলির গতিপথ পর্যবেক্ষণ, বাঁধগুলির শক্তি বাড়ানো ও দুর্বল বাঁধ মেরামতির কাজ দ্রুত গতিতে চালানো হচ্ছে। রাজ্যের তরফে আরও ৫০ কোটি টাকার একটি বিশেষ প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে, যা প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি কেন্দ্র এভাবে উদাসীন থাকে, তাহলে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব। দুর্যোগে কেন্দ্রের এই নিষ্ক্রিয়তা আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়।”
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের এই টানাপোড়েন কেবল প্রশাসনিক পর্যায়ে নয়, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে চলেছে। সামনে বর্ষা আরও তীব্র হতে পারে, এবং তার মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সহায়তা জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা ভবিষ্যতের জন্য এক বড় প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের প্রতিনিধি, জেলা শাসক, জলসম্পদ বিশেষজ্ঞ, এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সবার লক্ষ্য একটাই—যত দ্রুত সম্ভব বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া এবং জনজীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।