মুখ্য সমাচার :
দিঘায় পর্যটকদের নিরাপত্তায় কড়া নজরদারি, হোটেলগুলোর বাইরে বসানো হবে তথ্য বোর্ড সাইপ্রাসের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত প্রধানমন্ত্রী মোদী: বন্ধুত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচন লখনউ বিমানবন্দরে ফের হজ ফ্লাইটে জরুরি অবতরণ, ধোঁয়া আর চাকা থেকে শিখা, নিরাপদ ২৫০ হজযাত্রী দক্ষিণবঙ্গে কি অবশেষে স্বস্তির বারিধারা? বর্ষা প্রবেশের দিনক্ষণ জানাল আবহাওয়া দফতর ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: তেহরানে বিদেশমন্ত্রকে হামলা, নিহত ২৩০

বৈঠকে হতাশ’ অভিষেক, বেরিয়ে গেলেন শেষ না করেই, সন্ত্রাস, নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা নেই, শুধুই চা-চক্র

সাম্প্রতিক সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকে অংশগ্রহণ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
Pressman
11 June, 2025
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও এলাকায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর যখন গোটা দেশ নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস দমন নীতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে, তখন এই বৈঠকের ডাক অনেকের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি পদক্ষেপ বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, সেই বৈঠক ছিল অনেকটা প্রথাগত সৌজন্যের বলয়ে আবদ্ধ – যার ফলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ওই বৈঠক থেকে একরাশ হতাশা নিয়েই ফিরে আসেন।

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আয়োজিত এই বৈঠক মূলত বিদেশ সফর থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘সফলতা’ উদযাপন ও প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় – এমনটাই অভিযোগ উঠেছে বিরোধী শিবির থেকে। বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিভিন্ন দলের সাংসদদের। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী সাংসদ এতে যোগ দিলেও, বৈঠকের শুরু থেকেই তিনি বৈঠকের প্রকৃতি দেখে বিরক্ত হন। বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় হওয়া উচিত ছিল সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পাকিস্তানের ভূমিকা ও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারতের অবস্থান নিয়ে আলোচনা। কিন্তু সেসব বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলেই অভিষেক ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যাচ্ছে।

বৈঠক শুরু হয় করমর্দন ও ছবি তোলার মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল আলাপচারিতা, দলীয় সাংসদদের অভিনন্দন, বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া – এইসব নিয়েই ঘুরপাক খায় পুরো বৈঠক। সন্ত্রাসবাদ ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলিকে স্পর্শও করা হয়নি। অভিষেকের মতে, এই ধরনের বৈঠক দেশের জনগণের করের টাকায় আয়োজিত হলে তা শুধু লোক দেখানো সৌজন্য নয়, জনগণের সাথে প্রতারণার শামিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রতিক্রিয়া শুধু রাজনৈতিক নয়, তা এক গভীর বার্তাও দেয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে যেখানে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে একজোট হওয়া উচিত, সেখানে শাসকদলের তরফে এই ধরনের 'ইভেন্ট-সেন্ট্রিক' আচরণ আসলে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলেই অনেকে মনে করছেন। অভিষেকের মতো একজন তরুণ নেতা, যিনি ক্রমেই জাতীয় রাজনীতিতে নিজের অবস্থান দৃঢ় করছেন, তাঁর এমন হতাশা প্রকাশ নিছক ব্যক্তিগত অনুভূতি নয় – বরং দেশের বিরোধী কণ্ঠগুলোর একটি সম্মিলিত হতাশার বহিঃপ্রকাশ।

বৈঠক শেষে অভিষেক বৈঠক ত্যাগ করেন, যা অনেকের নজরে আসে। সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে ট্রোল করা হলেও তাঁর দল এই পদক্ষেপকে 'নৈতিক অবস্থান' বলে ব্যাখ্যা করেছে। দলের তরফে বলা হয়েছে, “জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কোনো কথা না বলে যদি শুধু প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার মঞ্চে বৈঠককে পরিণত করা হয়, তাহলে তা গণতন্ত্রের অবমূল্যায়ন।”

সবমিলিয়ে, এই ঘটনা কেবল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হতাশা’ নয়, বরং বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও ‘ইভেন্ট-রাজনীতির’ প্রবণতার প্রতি একটি কটাক্ষ হিসেবেই সামনে এসেছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, “কীভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই হবে যদি সর্বদলীয় বৈঠকেও তার গুরুত্ব না থাকে?”
Follow Us ই-পেপার