তিন বছরের ক্লান্তিকর যুদ্ধের পর ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ এলাকা রাশিয়ার দখলে, থমকে গেল জনজীবন।
দীর্ঘ তিন বছরের নিরন্তর যুদ্ধের পর ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। একাধিক শহর রাশিয়ান ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে জানা গেছে। এই সংঘাত ইউক্রেনের স্বাভাবিক জনজীবনকে সম্পূর্ণভাবে স্তব্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে দেশটি এক গভীর অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ ২৫ মাস ধরে ইউক্রেনের জন্য এক দুঃস্বপ্নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাগাতার গোলাবর্ষণ, অবকাঠামো ধ্বংস এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের বাস্তুচ্যুতির ফলে ইউক্রেনের অর্থনীতি ও সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ইউক্রেনীয় প্রতিরোধের মুখে রাশিয়া প্রাথমিকভাবে কিয়েভ দখলের চেষ্টা করলেও, পরবর্তীতে তাদের কৌশল পরিবর্তন করে দেশের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসন অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশই এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। মারিউপোল, বাখমুত এবং আভদিভকার মতো শহরগুলো দীর্ঘ অবরোধ ও তীব্র যুদ্ধের পর রাশিয়ান বাহিনীর হাতে চলে গেছে। এই শহরগুলোর বহুলাংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একাধিকবার ঘোষণা করেছেন যে এই অঞ্চলগুলো রাশিয়ার "ঐতিহাসিক ভূমি" এবং সেখানকার মানুষেরা রাশিয়ার সাথে "পুনরায় একত্রিত" হতে চায়। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং ইউক্রেন এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে একে অবৈধ দখলদারিত্ব হিসেবে অভিহিত করেছে। যুদ্ধের এই পর্যায়ে এসে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশটির পুনর্গঠন এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা এক দীর্ঘ ও কঠিন প্রক্রিয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মানবিক সংকট আরও গভীর হচ্ছে, এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ এখনও শরণার্থী জীবন যাপন করছেন। আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর ইউক্রেনকে এখন অনেকাংশেই নির্ভর করতে হচ্ছে। যদিও ইউক্রেনীয় বাহিনী এখনও কিছু অঞ্চলে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, সামগ্রিকভাবে দেশটির সামরিক সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা অব্যাহত থাকলেও, রাশিয়ার বিপুল সামরিক শক্তির সামনে তা যথেষ্ট নয় বলে অনেকেই মনে করছেন। এই যুদ্ধ কেবল ইউক্রেনের জন্য নয়, সমগ্র ইউরোপের নিরাপত্তার জন্যও এক গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্লেষকরা এই সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শান্তি আলোচনার সমস্ত প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হওয়ায়, অদূর ভবিষ্যতে এই সংকটের সমাধানের কোনো সুস্পষ্ট পথ দেখা যাচ্ছে না। ইউক্রেন এখন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, যেখানে লাখো মানুষের জীবন এবং দেশের ভাগ্য এক সুতোয় ঝুলছে।