মুক্তিযোদ্ধা শ্রেণি পরিবর্তনে নতুন অধ্যায়: শেখ মুজিবুর রহমান এখন 'মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী শক্তি
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত নতুন অধ্যাদেশ 'মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল অধ্যাদেশ ২০২৫' অনুযায়ী, জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাজউদ্দীন আহমদের মতো মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী নেতারা আর 'বীর মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে বিবেচিত হবেন না। পরিবর্তে তাঁদের 'মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী শক্তি' হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এই নতুন শ্রেণিবিভাগ দেশের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে, যা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
প্রেসিডেন্টের অনুমোদনে জারিকৃত এই অধ্যাদেশটি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে মুজিবনগর সরকার গঠনকারী প্রায় ৪০০ জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য সহ অন্যান্যদের জন্য প্রযোজ্য হবে। নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, 'বীর মুক্তিযোদ্ধা' তারাই, যারা সরাসরি পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। এর ফলে, যারা মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা এই তালিকা থেকে বাদ পড়বেন। অধ্যাদেশে মহম্মদ ইউনুসের সরকার মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছে। এক. যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রাখেন এবং বাংলাদেশের যেসব নাগরিক বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। দুই. যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত, মুজিবনগর সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিন. মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ বা এমপিএ, যাঁরা পরবর্তী সময়ে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন। চার. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক। পাঁচ. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। এ প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের নামও উঠে এসেছে, যিনি যুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থান করে তহবিল সংগ্রহে সহযোগিতা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁকে 'মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী' হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি শেখ মুজিব ও অন্যান্যদের অবদানের সঙ্গে তার অবদানকে সমীকরণের চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকার মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পাঁচ ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করেছে, যা এই নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকর করা হচ্ছে। এই পরিবর্তন দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বীরত্বপূর্ণ অবদানকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে।